কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চুইঝালের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। এখন অনলাইনেও কেনা যাচ্ছে খুলনাঞ্চলের বিখ্যাত চুইঝাল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে চুইয়ের আবাদ এবং বাজার রমরমা। শুকনো ও কাঁচা উভয় অবস্থায় বিক্রি হয় এটি। চুইয়ের জনপ্রিয়তা আর গ্রহণযোগ্যতার কারণে দেশ-বিদেশে চুইঝাল বা চুই হোটেল নামে অগণিত হোটেল রেস্তোরাঁর নামকরণ করা হয়েছে। এসব হোটেলে চুইসমৃদ্ধ খাবার পরিবেশন করা হয়।
ভোজনবিলাসীদের পছন্দের চুই গাছের ভেষজ গুণ অসামান্য। পেটেরপীড়া, ক্ষুধামন্দা, রুচি বাড়ানো, পেটের গ্যাস নিবারণ, শ্বাসকষ্ট-কাশি, ডায়রিয়া, ঘুম, শারীরিক দুর্বলতা কমাতে ওষুধ হিসেবে কাজ করে চুইঝাল।
মাংসের স্বাদ বাড়ানোর জন্য চুইঝাল ব্যবহারের প্রচলন যুগ যুগ ধরে। সেজন্য কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চুইঝালের দাম এরই মধ্যে বেড়ে গেছে।
খুলনায় বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি চুইঝালের চাষ হয় শস্য ভান্ডারখ্যাত ডুমুরিয়ায় উপজেলায়।
এ উপজেলার রাজিবপুর গ্রামের চুইচাষী এলাহী গাজী বলেন, ‘এবার কোরবানির ঈদে চুইঝালের ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে। পাইকাররা ৪০০ টাকা কেজি দরে চুইঝাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে মাটির তলের চুইঝাল প্রতি কেজি ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করছি।’
এদিকে, চুইঝালের জন্য বিখ্যাত খুলনায় এবারের কোরবানির বাজারে এ মসলাটির দাম কিছুটা বেড়েছে। মাস খানেক আগেও চুইঝালের কেজি ছিলো ৫০০ টাকা সেটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ টাকায়। আর যে চুইঝাল ৮০০ টাকায় পাওয়া যেত তা বেড়ে হাজার টাকার ওপরে।
খুলনায় বড় বাজার, কেসিসি সন্ধ্যা বাজার ও গল্লামারী বাজারে সবচেয়ে বেশি চুইঝাল কেনাবেচা হয়ে থাকে।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির ঈদে চুইঝালের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এটি শুধু মাংসের তরকারিতেই নয়, সেইসাথে অন্যান্য তরকারি, ডাল ও মাছের সঙ্গেও খাওয়া যায়। খুলনার চুই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান তারা।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, দক্ষিণাঞ্চলে পরিচিত ও জনপ্রিয় গুরুত্বপূর্ণ মশলা ফসল চুইঝাল খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল প্রভৃতি জেলায় চাষ করা হয়।
বড় বাজারের চুইঝাল ব্যবসায়ী শাহিন বলেন, চুইঝাল দেশের অনেক স্থানেই চাষ করা হয়। তবে খুলনার চুইঝালের স্বাদ ও ঘ্রাণ আলাদা। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চুইঝালের বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে।
তিনি জানান, ফুলতলা ও দৌলতপুর থেকে চুইঝাল আনেন তিনি। প্রকারভেদে কেজি বিক্রি করছেন ৪০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
কোরবানি উপলক্ষে বড় বাজার থেকে চুইঝাল কিনতে এসেছেন জিয়াউল হক মিলন। তিনি বলেন, ‘খুলনার ঐতিহ্যবাহী খাবারের কথা আসলেই সবার প্রথমে আসে চুইঝালের কথা। চুইঝালে দিয়ে গরুর বা খাসির মাংস একনামে বিখ্যাত। চুইঝালের ঘ্রাণ মাংসকে করে তোলে অতুলনীয় সুস্বাদু। যে কারণে কুরবানি আসার আগেই চুইঝাল কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
তবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে এবার দাম একটু বাড়তি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অনলাইনে দেশব্যাপী চুইঝাল সরবরাহ করছে উড়া ও খুলনামার্ট নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। কোরবানি উপলক্ষে তাদেরও বিক্রি অনেকগুন বেড়েছে বলে জানান তারা।